ভূমিকা
বদনজর থেকে বাঁচার উপায় :
আমাদের সমাজে “বদনজর” বা “নজর লাগা” শব্দটি খুবই প্রচলিত। কেউ সুন্দর কিছু অর্জন করলে, বা কারও সন্তান, বাড়ি, ব্যবসা ইত্যাদিতে হঠাৎ সমস্যা দেখা দিলে অনেকে বলে— “নজর লেগেছে!”
ইসলামের দৃষ্টিতেও বদনজর একটি বাস্তব বিষয়। নবী করিম ﷺ বলেন—
“নজর (বদনজর) সত্য।”
(সহিহ বুখারি, হাদীস: ৫৭৩৯)
অর্থাৎ, বদনজর বাস্তব ও এটি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ও কুরআন-হাদীস অনুযায়ী আমল করলে বদনজর থেকে সহজেই বাঁচা যায়।

বদনজরের লক্ষণ
বদনজর লাগলে অনেক সময় শরীর, মন বা পারিবারিক জীবনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায়। যেমনঃ
- হঠাৎ অসুস্থতা, মাথা ব্যথা, দুর্বল লাগা
- ব্যবসা বা কাজে বারবার বাধা আসা
- মন খারাপ, অকারণে কান্না
- বাচ্চারা হঠাৎ কান্না শুরু করা বা ঘুম না হওয়া
- গৃহে অশান্তি বা মনমালিন্য
এগুলো বদনজরের ইঙ্গিত হতে পারে, তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য রুকইয়াহ ও দোয়ায় মনোযোগী হওয়া উচিত।
বদনজর সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি
নবী করিম ﷺ বদনজর সম্পর্কে সতর্ক করেছেন এবং এর প্রতিকার হিসেবে কিছু দোয়া ও রুকইয়াহ শিক্ষা দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন—
“যদি কিছু জিনিস তাকদিরকে অতিক্রম করতে পারত, তবে বদনজরই তা করত।”
(সহিহ মুসলিম, হাদীস: ২১৮৮)
অর্থাৎ, বদনজর খুবই শক্তিশালী প্রভাব রাখে। তাই এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা নেওয়া জরুরি।
বদনজর থেকে বাঁচার উপায়
১️ আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা (তাওয়াক্কুল)
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা রাখে, আল্লাহ তাকে যথেষ্ট সাহায্য করেন। বদনজর থেকেও তিনি নিরাপদ থাকেন।
২️ নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত ও যিকির
নিয়মিত নিম্নোক্ত সূরাগুলো পড়া বদনজর থেকে রক্ষা করে—
- সূরা আল-ইখলাস
- সূরা আল-ফালাক
- সূরা আন-নাস
- আয়াতুল কুরসী (সূরা আল-বাকারা: ২৫৫)
- শেষ দুই আয়াত (সূরা আল-বাকারা: ২৮৫-২৮৬)
এগুলো সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়া অত্যন্ত উপকারী।
৩️ সকাল-সন্ধ্যায় রুকইয়াহ শারইয়াহ করা
রুকইয়াহ হলো কুরআন ও হাদীসের দোয়া দ্বারা আত্মিক চিকিৎসা। নিজের উপর, সন্তানদের উপর বা ঘরে রুকইয়াহ করা বদনজর ও জিনের প্রভাব থেকে সুরক্ষা দেয়।
৪️ প্রশংসার সময় “মাশাআল্লাহ” বলা
কাউকে বা কিছু দেখে ভালো লাগলে শুধু চোখে প্রশংসা না করে “মাশাআল্লাহ” বলা উচিত। এতে বদনজর লাগার আশঙ্কা কমে যায়।
৫️ বদনজর থেকে রক্ষার দোয়া
নবী ﷺ বদনজর থেকে রক্ষার জন্য এই দোয়া শিখিয়েছেন—
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
(আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার মাধ্যমে আশ্রয় চাই, প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী ও বদনজর থেকে।)
— সহিহ বুখারি
এই দোয়াটি সকাল-সন্ধ্যায় এবং সন্তানদের জন্যও পড়া উচিত।
৬️ রুকইয়াহ দ্বারা চিকিৎসা
যদি মনে হয় বদনজর ইতিমধ্যে লেগেছে, তাহলে রুকইয়াহ শারইয়াহর মাধ্যমে চিকিৎসা করা সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। কুরআনের আয়াত পাঠ, দোয়া ও পানি/তেল ফুঁ দিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বদনজর সম্পর্কিত কিছু ভুল ধারণা
অনেকে বদনজর থেকে বাঁচতে তাবিজ, ঝাড়ফুঁক, বা অজানা জাদুকরের কাছে যান। এটি সম্পূর্ণ হারাম ও শিরকসম। নবী করিম ﷺ বলেছেন—
“যে ব্যক্তি তাবিজ ধারণ করে, সে শিরক করেছে।”
(আহমদ, হাদীস: ১৬৯৬৯)
তাই ইসলামিক রুকইয়াহ ব্যতীত অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে না।
উপসংহার
বদনজর বাস্তব, তবে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে আমল করলে এতে ভয়ের কিছু নেই।
নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত, সকাল-সন্ধ্যার যিকির, দোয়া ও রুকইয়াহ শারইয়াহই হলো বদনজর থেকে বাঁচার একমাত্র নিরাপদ উপায়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বদনজর, জিন ও শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে হেফাজত করুন।
