রুকইয়াহ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ের পুনর্বিবেচনা:
ফুল টাইম বা পেশা হিসেবে রুকইয়াহ নেয়া উচিত কি না, এই প্রশ্ন খুবই স্পর্শকাতর। রুকইয়াহ পেশাদারিত্বে আনলে এর প্রভাব রুকইয়াহ প্রক্রিয়ার ইখলাস বা আন্তরিকতার ওপর পড়তে পারে বলে অনেক আলেম মতামত দিয়েছেন। তবে, এ বিষয়ে সাধারণ মানুষ নয়, বরং জ্ঞানী আলেমগণই নির্দিষ্ট রায় দিতে পারেন। কারণ এটি গভীর জ্ঞানের বিষয়। এমন অবস্থায় আলেমদের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
এ বিষয়ে কুরআন ও হাদিস থেকে নির্দিষ্ট দলিল পাওয়া কঠিন হতে পারে, তবে আলেমগণ নীতিগত ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। মূলত, রুকইয়াহ করা নেক আমল এবং সৎ উদ্দেশ্যে এটি করলে, এটি ইবাদতের অংশ হতে পারে। তবে কেউ যদি শুধু পার্থিব লাভের উদ্দেশ্যে বা অসৎ উদ্দেশ্যে রুকইয়াহ করেন, তাহলে এর ফায়দা ক্ষীণ হয়ে যায় এবং এতে রুকইয়াহ ফিল্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
একজন রাকির দায়িত্ব কেবল কুরআন তেলাওয়াত করে রোগীকে রুকইয়াহ প্রদান করা নয়; বরং তিনি আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনধারা এবং ইবাদতের মান উন্নত করতে সহায়তা করবেন। আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনার জন্য রাকির ভূমিকা হওয়া উচিত একজন অভিভাবকের মতো, যেন তিনি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং আল্লাহর কাছে শেফা প্রার্থনা করতে সক্ষম হন।
রুকইয়াহর কার্যকারিতা পেতে হলে, রোগীরও দায়িত্ব রয়েছে। যদি রোগী হারাম কাজ, যেমন গান-বাজনা বা সালাত অবহেলা না ত্যাগ করে, তবে রুকইয়াহ সাময়িক ফায়দা দিলেও দীর্ঘমেয়াদে তা টিকে থাকবে না। তাই রাকির উচিত যথাসম্ভব নাসিহাহ প্রদান করা, রোগীর আমল সম্পর্কে অবগত থাকা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তাদেরকে সঠিক পথে চলার আহ্বান জানানো।
রুকইয়াহ সঠিকভাবে না হলে, শুধু রাকিকে দায়ী করা উচিত নয়। বরং রোগীর নিজ দায়িত্বেও খেয়াল রাখা উচিত। রুকইয়াহ গ্রহণ করার পরে রোগী যদি নিজে থেকে সেলফ রুকইয়াহ না করেন, দ্বীনি জ্ঞান বাড়ানোর চেষ্টা না করেন, গুনাহের পথ ত্যাগ না করেন, তাহলে এতে দোষ রোগীরই। রুকইয়াহর পাশাপাশি সঠিক আমল ও তাওবা অপরিহার্য।
এমনকি, রাকির সঠিক গুণাবলি সম্পর্কে জেনে তারপরই রুকইয়াহ সেন্টারে যাওয়া উচিত। অজানা, অসৎ রাকির কাছে গেলে প্রতারিত হবার সম্ভাবনা থাকে। প্রথমেই রাকি, রুকইয়াহ পদ্ধতি এবং তার গুণাবলি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে গেলে প্রতারণা এড়ানো সম্ভব। অন্যথায় ভুল বুঝতে সময় লেগে যায় এবং এ থেকে নেতিবাচক ধারণা জন্ম নেয় যে সব রাকিই খারাপ।
সবচেয়ে বড় বিষয়, নিজেরা সচেতন থাকতে হবে। আল্লাহর নৈকট্য এবং রুকইয়াহর সঠিক পদ্ধতির ব্যাপারে নিজে আগ্রহী হতে হবে। নাহয় কোন বিপদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না।