রুকইয়াহ বিষয়ে বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর : FAQ

সেকশন ১ : রুকইয়াহ বিষয়ে

রুকইয়াহ শারইয়াহ বিষয়ক প্রাথমিক জিজ্ঞাসা ও জবাব

উত্তরঃ ব্যবহারিক অর্থে রুকইয়াহ শারইয়াহ বলতে ‘ইসলামসম্মত ঝাড়ফুঁক’ বুঝায়। রুকইয়ার পারিভাষিক অর্থ হল, “কোরআনের আয়াত, আল্লাহর নামের যিকর, হাদিসে রাসূল ﷺ অথবা সালাফে সালেহীন থেকে বর্ণিত দোয়া পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কোন বিপদ থেকে মুক্তি চাওয়া কিংবা রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করা।” একদম সহজে বললে, রুকইয়াহ হলো বদনজর, জ্বীন, যাদু ইত্যাদি প্যারানরমাল সমস্যার পাশাপাশি কিছু শারিরীক-মানসিক রোগের জন্য ইসলাম সম্মত ঝাড়ফুক। এই চিকিৎসায় সাধারণত কুরানের আয়াত ও হাদীসে বর্ণিত দুয়া পড়ে সরাসরি ঝাড়ফুঁক করা হয়, অথবা পানি, মধু, তেল ইত্যাদিতে ফুঁ দিয়ে ব্যবহার করতে বলা হয়।

উত্তরঃ রাকীকে দিয়ে রুকইয়াহ করানো ছাড়া নিজের বা পরিবারের জন্য নিজেই রুকইয়াহ করা যায়। আর এটাকেই সেলফ রুকইয়াহ বলে।

 

উত্তরঃ এটা মনের আশা পূরণ, অসাধ্য সাধন কিংবা বশ করার কোন তদবির না, নামাজ-রোজার মত বিশেষ কোন ইবাদাত না। এটা একটা চিকিৎসা পদ্ধতি।

 

উত্তরঃ না। আগের কবিরাজ, তান্ত্রিক, জিনহুজুর ইত্যাদির কাছে যাওয়ার জন্য তওবা করে আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে, তদবিরের জিনিসপত্র ও তাবিজকবচ সব নষ্ট করে এরপর রুকইয়াহ শুরু করবেন।

 

উত্তরঃ একটা পাত্রে পর্যাপ্ত পানি নিয়ে সিহরের আয়াত ও তিনকুল ৩বার করে পড়ে ফুঁ দিন। এরপর তাবিজ বা জাদুর জিনিস একত্র করে সেখানে ডুবিয়ে রাখুন। তাবিজের থেকে কাগজ, সুতা, পিন ইত্যাদি বের করুন, সব গিট কেটে ফেলুন, কাগজ ছিঁড়ে ফেলুন। এরপর সব ভালোভাবে পানিতে ডুবিয়ে নষ্ট করুন। সবশেষে এগুলো পরিত্যক্ত স্থানে ফেলে দিন। আর সম্ভব হলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলুন। জাদুর জিনিস খালি হাতে ধরবেন না, আর নষ্ট করার সময় বারবার সুরা ফালাক-নাস পড়ুন। আরও বিস্তারিত দেখুন – ruqyahbd.org/tabiz ঠিকানায়।

 

উত্তরঃ সমস্যা অনুযায়ী সেই লক্ষণের সাথে মিলিয়ে দেখলে বুঝা যাবে, প্রয়োজনে রুকইয়াহ করে তার প্রভাব দেখে নিশ্চিত হওয়া লাগতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রে এসব অদৃশ্যের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হয়না।

 

উত্তরঃ প্রথমত, পৃথিবীর কোন রোগের ক্ষেত্রেই এটা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব না, এটা আল্লাহই ভাল জানেন। আল্লাহ যতদিন চাইবেন ততদিন লাগবে। তবে অভিজ্ঞতার আলোকে বললে, সমস্যার দৈর্ঘ-প্রস্থ-গভীরতা অনুযায়ী সময় কম বেশি লাগে। ভালোভাবে রুকইয়াহ করলে বদনজরের ক্ষেত্রে ১ সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত লাগতে পারে। শুধু জ্বিনের আসর হলে; এক থেকে সাতদিন লাগে, সমস্যা বেশি হলে কয়েকমাস পর্যন্ত লাগতে পারে। জাদুর ক্ষেত্রে এভাবে বলা যায় না, তবে বারবার জাদু না করলে বা জাদুর সাথে জ্বিন জড়িত না থাকলে এক সপ্তাহ থেকে থেকে চার মাস পর্যন্ত লাগতে পারে। তবে যদি জাদুর কারণে জ্বিন ভর করে কিংবা বারবার জাদু করতে থাকে তাহলে বিষয়টা জটিল হয়ে যায়, তখন সময় বলা একদমই সম্ভব না। তবে কিছুদিন ভালভাবে রুকইয়াহ করার পর সমস্যা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। আরেকটা বিষয় হল, আল্লাহর ইচ্ছায় কারও কারও ক্ষেত্রে আজীবন কিছু সমস্যা থেকে যায়। সম্পূর্ণ ভাল হয় না। এক্ষেত্রে রোগী এবং তার পরিবার যদি কোন নাজায়েজ বা কুফরি জাদুর সহযোগিতা না নেয়, বিপদে সবর করে, তাহলে আখিরাতে আল্লাহ এর বিনিময়ে ক্ষমা এবং জান্নাত দেবেন।

উত্তরঃ এটা একটা বিশেষ রুটিন, এতে একসাথে অনেক ধরণের চিকিৎসা প্রয়োগ করা হয়। যেমনঃ পানি, মধু, কালোজিরা খাওয়া, তিলাওয়াত করা, গোসল, তেল ব্যবহার ইত্যাদি। (বিস্তারিত পাওয়া যাবে ruqyahbd.org/detox ঠিকানায়, অথবা ‘রুকইয়াহ’ বইয়ে।)

 

উত্তরঃ এটার উত্তর ব্যক্তিভেদে ভিন্ন। শুধু বিচ্ছেদের জাদুর ক্ষেত্রে যদি স্বামীস্ত্রী দুইজন দুই স্থানে থাকে, তখন একসাথে দুজনের রুকইয়াহ করতে পরামর্শ দেয়া হয়। এর বাহিরে একজনের রুকইয়াহ অন্যজন করলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়, তাই আমরা মানা করে থাকি । তবে চাইলে তিলাওয়াত করে দোয়া করতে পারেন।

 

উত্তরঃ রুকইয়াহ শুনবেন, মাসনুন যিকরগুলো কষ্ট করে হলেও করবেন। আর পড়া সহিহ এমন কাউকে দিয়ে পানি ইত্যাদি পড়িয়ে নেবেন। আর নিজে শীঘ্রই প্রাথমিক সুরাগুলো সহিহভাবে শিখে নেবেন।

 

উত্তরঃ রুকইয়াহ করলে যতক্ষণ ইফেক্ট টের পাচ্ছেন, ততক্ষণ বুঝবেন আপনার উপকার হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে আগের মতই রুকইয়াহ করবেন। রুকইয়াহ শোনা বা তিলাওয়াত শেষে প্রসাব-পায়খানা এবং ওযু করে নিলে অনেকটা ফ্রেশ লাগবে। আর কষ্ট বেশি হলে রুকইয়ার পর আয়াতুশ শিফা পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে খেলে ভাল লাগবে। আর যেকোনোভাবে রুকইয়ার গোসল করলে এক্ষেত্রে সবচেয়ে আরাম পাবেন ইনশাআল্লাহ।

 

 

সেকশন ২ : রুকইয়ার আয়াত

বিভিন্ন ধরণের রুকইয়ার আয়াতের ব্যাপারে ধারণা

উত্তর: সুরা আরাফ ১১৭-১২২, সুরা ইউনুস ৮১-৮২ এবং সুরা ত্বহা ৬৯নং আয়াত – এগুলোকে সিহরের আয়াত বলে। এর সাথে সুরা বাকারা ১০২নং আয়াতও পড়া যায়।

উত্তর: আয়াতে শিফা মোট ৬টি। সূরা তাওবাহ ১৪, ইউনুস ৫৭, নাহল ৬৯, বনি ইসরাইল ৮২, শু’আরা ৮০, হা-মিম সাজদা ৪৪নং আয়াত।

উত্তর: আয়াতুস সাকিনা মোট ৬টি। সূরা বাকারা ২৪৮, সূরা তাওবা ২৬ এবং ৪০, সূরা ফাতহ ৪, ১৮ এবং ২৬নং আয়াত।

উত্তর: রুকইয়াহ বইয়ের শেষে আছে, এছাড়া ruqyahbd.org/pdf  লিংকে পিডিএফ এবং মোবাইল অ্যাপ পাওয়া যাবে।

উত্তর: প্রসিদ্ধ যেসব আয়াত দিয়ে সাধারণভাবে সব রোগব্যাধি ও সমস্যার জন্য রুকইয়াহ করা হয়, সেগুলোকে রুকইয়ার কমন আয়াত বলে। কমন আয়াতগুলোর পিডিএফ উল্লেখিত ডাউনলোড পেজে পাওয়া যাবে। আর এগুলোর রেকর্ড শুনতে চাইলে অডিও ডাউনলোড পেজে “বিভিন্ন ক্বারিদের সাধারণ রুকইয়াহ” অংশে পাবেন।

 

সেকশন ৩ : রুকইয়ার অডিও

রুকইয়ার অডিওর ব্যাপারে ধারণা

উত্তরঃ রুকইয়াহ করলে কুরানের যে আয়াত ও হাদীসের দুয়া পড়া হয় তার রেকর্ড করা অডিওই রুকইয়ার অডিও। সেলফ রুকইয়াতে যখন কোন রাকি থাকেন না এবং নিজেও আয়াতগুলো পড়তে পারেন না তখন রুকইয়ার অডিও শুনে চিকিৎসা করা হয়।

উত্তরঃ রুকইয়াহ সাপোর্ট বিডির ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে। ঠিকানা- ruqyahbd.org/download অথবা কারও ফোন বা পিসি থেকে কপি করে নেয়া যাবে।

 

উত্তরঃ না, তেমন বাঁধাধরা নেই। তবে যতটা গুরুত্ব, মনোযোগ এবং ইয়াক্বিনের সাথে শুনতে পারবেন, তত বেশি উপকার আশা করা যাবে। শোনার সময় নিয়ত করবেন ‘অমুক সমস্যার জন্য শুনছি।’ অযু করে শুনতে পারলে উত্তম, তবে অযু ছাড়াও শোনা যাবে।

উত্তরঃ হবে। শোনার চেয়ে নিজে তিলাওয়াত করাই উত্তম। এক্ষেত্রে সরাসরি কোরআন দেখে, পিডিএফ থেকে দেখে বা প্রিন্ট করে নিয়ে কিংবা রুকইয়াহ বই থেকে পড়া যেতে পারে। (পিডিএফ ডাউনলোড- ruqyahbd.org/pdf)

উত্তরঃ প্রতিদিন একটা অডিও অথবা কমপক্ষে পৌনে একঘণ্টা কাজ থেকে আলাদা হয়ে পূর্ণ গুরুত্বের সাথে শুনবেন। এটা সর্বনিম্ন, এর বেশি পারলে আরও ভাল। দিনের বেলায় না পারলে একদম সকালে ফজরের পরপর অথবা রাতে ঘুমের আগে সময় বের করে শুনবেন। আর বাকিগুলো এমন সময় শুনবেন যেসব কাজে তেমন মনোযোগ দিতে হয় না, অর্থাৎ মনোযোগটা রুকইয়ার দিকে রাখবেন আর হালকা কাজ করবেন।

উত্তরঃ রুকইয়ার পানি রাখবেন কাছে, চোখে-মুখে ছিটা দিবেন, মাঝেমাঝে পান করবেন। এভাবে জেগে থাকতে চেষ্টা করবেন। এরপরেও ঘুমিয়ে পড়লে সমস্যা নেই, কানে রুকইয়ার আওয়াজ গেলেই যথেষ্ট, অল্প হলেও উপকার হবে।

সেকশন ৪ : অন্যান্য রুকইয়াহ সাপ্লিমেন্ট

রুকইয়ার পানি খাওয়া, রুকইয়ার গোসল, অন্যান্য সহযোগী পথ্যের ব্যাপারে প্রশ্নোত্তর

উত্তরঃ রুকইয়ার আয়াত বা দোয়া পড়ে ফুঁ দেয়া পানিকে রুকইয়ার পানি / পড়া পানি বলে।

উত্তরঃ রুকইয়ার আয়াত/দুয়া পানিতে পড়ে ফুঁ দিয়ে বা পানিতে হাত দিয়ে ডুবিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করাটাই রুকইয়ার গোসল। বিভিন্ন নিয়মের গোসল আছে।

 

উত্তরঃ গোসলের জন্য বালতিতে পানি নিন। এরপর সেখানে হাত রেখে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা কাফিরুন, ইখলাস, ফালাক, নাস – এর আগে এবং পর দরুদ – সব ৭বার করে পড়ে গোসল করুন। কোনোদিন সময় সুযোগ কম থাকলে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, তিনকুল এবং দরুদ ৩বার/৭বার পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে গোসল করে নিন।

উত্তরঃ হ্যাঁ, রুকইয়ার গোসলের আগে বা পরে সাধারন পানি দিয়ে গোসল যাবে। সমস্যা নেই।

উত্তরঃ বদনজরের রুকিয়ার গোসলে হাত ডুবাতে হয়। আর অন্যগুলোতে পড়ার পর ফুঁ দিয়ে পানি মিলিয়ে নিতে হয়। তাই আপনাকে যে নিয়ম সাজেস্ট করা হবে সেরকম মাপের পাত্রেই পানি তৈরি করবেন।

উত্তর: সাতটি বরইয়ের পাতা বেটে (পাটায় পিষে) পানিতে গুলান। এরপর সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী, সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস- সব তিনবার করে পড়ে ফুঁ দিন। এরপর এই পানি তিন ঢোক পান করুন, বাকিটা দিয়ে গোসল করুন। উল্লেখ্য, এই পানি গরম করবেন না, এর সাথে অন্য পানি মিশাবেন না। (চাইলে সব পড়ে পাতায় ফুঁ দেয়ার পরেও পানিতে মেশাতে পারেন। এবং এর সাথে সিহরের আয়াতগুলো পড়লে আরও বেশি উপকার হবে।)

সেকশন ৫ : মেয়েদের বিশেষ প্রশ্নগুলো

নারীদের রুকইয়ার সংক্রান্ত বিশেষ প্রশ্ন ও তার উত্তর

উত্তর: হ্যাঁ, শোনা যাবে। কিন্তু নিজে তেলাওয়াত করা যাবে না। গোসল করা পানি খাওয়া যাবে। তবে এক্ষেত্রে আগে থেকে পানি পড়ে রাখতে হবে বা অন্য কেউ পড়ে ফুঁ দিয়ে দিলে সেটা ব্যবহার করতে হবে। সহযোগিতা করার মত কাউকে না পেলে রুকইয়ার দোয়া ৮-১০টি তিনবার করে পড়ে পানি প্রস্তুত করবেন।

উত্তর: আগের পানি থাকলে সেসব মিশিয়ে গোসল করবেন। আর নতুন পানি তৈরি করা লাগলে আপনি পড়বেন না। অন্য কেউ পানি পড়ে দিবে, এরপর আপনি শুধু গোসল করবেন। যদি কাউকে না পান, তবে শুধু দুয়া পড়ে পানি তৈরি করতে হবে। রুকইয়ার আয়াত এবং দোয়া ইবুক’এর প্রথম ১-১০নং দুয়া পড়বেন (ruqyahbd.org/pdf  লিংকে পিডিএফ আছে, অথবা রুকইয়াহ বই এর শেষেও পাবেন)

উত্তরঃ প্রথমতঃ পিরিয়ডের সময় যেকোন দোয়া পড়া জায়েজ। তাই মাসনুন আমলের মাঝে যে দোয়াগুলো আছে, সেসব নিশ্চিন্তে পড়তে পারেন। দ্বিতীয়তঃ অনেক ফক্বিহদের মতে আয়াতুল কুরসি এবং তিনকুল হিফাজতের দোয়া হিসেবে পড়া বৈধ, এই মত অনুসরণ করলে এসবও পড়তে পারেন। আর সতর্কতা হিসেবে না পড়তে চাইলে ওইসব আয়াতের অডিও শুনতে পারেন । (মাসনুন আমল অ্যাপে সব একসাথে পাওয়া যাবে, ঠিকানা- bitly.com/masnun-app)

উত্তর: এর উত্তর ব্যক্তিভেদে ভিন্ন, তবে সাধারণত এই সময়ে আমরা রুকইয়াহ করতে মানা করি, যাতে সন্তানের উপর কোন ইফেক্ট না পড়ে। তবে গর্ভের সন্তান নষ্টের যাদুর সমস্যা থাকলে তখন করা যেতে পারে।

Scroll to Top